Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
Bangladesh has shown the world the way treating tuberculosis
Details

ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার চিকিৎসায় বাংলাদেশের উদ্ভাবিত পদ্ধতি বিশ্ব গ্রহণ করেছে। ২৪ মাসের পরিবর্তে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার রোগীকে ৯ মাসে সুস্থ করা সম্ভব হচ্ছে। নতুন এই পদ্ধতি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি বেনিন, বুরকিনা ফাসো, বুরুন্ডি, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকা, আইভরি কোস্ট, কঙ্গো, গিনি, নাইজার, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সোয়াজিল্যান্ড ও উজবেকিস্তানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া ইথিওপিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভিয়েতনাম ও মঙ্গোলিয়ায় এই পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে। সংস্থাটির ২০১৬ সালের ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা চিকিৎসার নির্দেশিকায় বাংলাদেশের উদ্ভাবিত পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি (এমডিআর-টিবি) বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। সংস্থাটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে এমডিআর-যক্ষ্মায় আক্রান্ত মানুষ প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার এবং ২০১৬ সালে এতে প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে এমডিআর-যক্ষ্মা রোগীর অনুমিত সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার।

যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্দিষ্ট মাত্রার ওষুধ সেবনে মানুষের শরীরে থাকা যক্ষ্মার জীবাণু ধ্বংস হয়। নিয়মিতভাবে ওষুধ সেবন না করলে বা মাঝপথে ওষুধ সেবন বন্ধ করলে অথবা নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ সেবন না করলে ব্যাকটেরিয়া ওষুধের বিরুদ্ধে টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে। এটাই ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা। সাধারণ নিয়মে ওষুধ সেবনে যক্ষ্মা তখন আর ভালো হয় না।

বাংলাদেশ এই ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এ ব্যাপারে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক শামিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে দীর্ঘ গবেষণার পর বাংলাদেশ নতুন এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এর সুফল পেতে শুরু করেছে বিশ্বের মানুষ। বিশ্বের সব দেশের জন্য এই পদ্ধতির অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।’

নতুন পদ্ধতি
সাধারণ যক্ষ্মার রোগীকে নিয়ম মেনে ছয় মাস ওষুধ সেবন করতে হয়। কোনো কারণে এমডিআর-যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে রোগীকে ২৪ মাস ওষুধ সেবন করে যেতে হবে। এতকাল যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসায় এটাই ছিল বিধি। ওষুধের বিন্যাস ও মিশ্রণে পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ দেখিয়েছে, নয় মাসে এমডিআর-যক্ষ্মা রোগী সুস্থ করা যায়।

যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আগে এমডিআর-যক্ষ্মা চিকিৎসায় প্রথম ছয়-আট মাস রোগীকে দৈনিক একটি ইনজেকশনের পাশাপাশি চার ধরনের ওষুধ সেবন করতে হতো। পরের ১৬-১৮ মাস দৈনিক চার পদের ওষুধ সেবন করতে হতো। নতুন পদ্ধতিতে রোগীকে প্রথম চার মাস দৈনিক একটি ইঞ্জেকশনসহ ছয় পদের ওষুধ সেবন করতে হয়। শেষ পাঁচ মাস দৈনিক চারটি ওষুধ সেবন করতে হয়। নয় মাসেই রোগী সুস্থ হয়ে যায়।

গবেষণা
নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে ১৯৯৭ সালে গবেষণা শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডেমিয়েন ফাউন্ডেশন। ডেমিয়েন ফাউন্ডেশন তখন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে সরকারের অংশীদার হিসেবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে কাজ করছিল। ৮২১ জন রোগীর ওপর তারা ওষুধের নতুন বিন্যাস ও মিশ্রণ নিয়ে পরীক্ষা চালায়। ময়মনসিংহ এলাকার রোগীদের নিয়ে ওই গবেষণা ফলাফল ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অন টিউবারকিউলিসিস অ্যান্ড লাং ডিজিজ-এ ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়।

শুরু থেকেই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডেমিয়েন ফাউন্ডেশনের তৎকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. আবদুল হামিদ সেলিম। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির পক্ষে পরামর্শক হিসেব জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে কাজ করছেন। মো. আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যক্ষ্মাবিষয়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জার্নালে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার পর নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে অনেক দেশেই ট্রায়াল ও গবেষণা শুরু হয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশের ট্রায়াল ও গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করে এ পদ্ধতি ব্যবহারের সুপারিশ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের দ্য সর্টার এমডিআর-টিবি রেজিমেন বা সংক্ষিপ্ত এমডিআর-যক্ষ্মা চিকিৎসাবিধিতে বলেছে, সুপারিশ করা নতুন এই পদ্ধতিতে সারা বিশ্বের এমডিআর-যক্ষ্মা রোগীরা উপকৃত হবে। কিন্তু এই পদ্ধতি যদি ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়, তা হলে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।

সুফল
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই পদ্ধতির একাধিক সুফল পাচ্ছেন রোগীরা। অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ বলেন, যক্ষ্মার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। অনেক রোগীর পক্ষে ২৪ মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যাওয়া কঠিন। অনেকের কানে সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। কোর্স শেষ হওয়ার আগেই অনেকে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন।

অন্যদিকে আর্থিক লাভের হিসাব দিলেন মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ২৪ মাসে ওষুধের খরচ পড়ে প্রায় সাত হাজার ডলার বা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশের পদ্ধতিতে খরচ পড়ে ৭০০ ডলার বা ৫০ হাজার টাকার কিছু বেশি। ২৪ মাসের কোর্সে রোগীকে বেশি দিন হাসপাতালে থাকতে হয় বলে আনুষঙ্গিক ব্যয়ও অনেক বেশি।

Images
Attachments
Publish Date
19/11/2019
Archieve Date
31/12/2020